হাওজা নিউজ এজেন্সি: দোআ ও জিয়ারত উদ্দেশ্য হলো তাঁকে ভুলে না যাওয়া এবং দোআ, জিকর ও জিয়ারতের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আত্মিক সংযোগ বজায় রাখা।
ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন,
سَتُصِیبُکُمْ شُبْهَةٌ فَتَبْقَوْنَ بِلاَ عَلَمٍ یُرَی وَ لاَ إِمَامٍ هُدًی وَ لاَ یَنْجُو مِنْهَا إِلاَّ مَنْ دَعَا بِدُعَاءِ اَلْغَرِیقِ قُلْتُ کَیْفَ دُعَاءُ اَلْغَرِیقِ قَالَ یَقُولُ یَا اَللَّهُ یَا رَحْمَانُ یَا رَحِیمُ یَا مُقَلِّبَ اَلْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِی عَلَی دِینِکَ.
“তোমাদের এমন এক শঙ্কা ও বিভ্রান্তির মুখোমুখি হতে হবে, যে সময় তোমরা কোনো প্রকাশ্য নেতা বা পথপ্রদর্শকহীন থাকবে। তখন সেই বিভ্রান্তি থেকে কেবল সেই ব্যক্তি মুক্তি পাবে, যে ‘ডুবন্তের দোআ’ দ্বারা আল্লাহকে আহ্বান করবে।”
যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, 'ডুবন্তের দোআ কী?' তখন তিনি বললেন:
“হে আল্লাহ! হে রহমান! হে রহীম! হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর স্থির রাখো।”
[কামালুদ্দীন, খণ্ড ২, পৃ. ৩৫১]
এই দোআ স্পষ্ট করে দেয় যে গায়বাতের সময়ে দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা অপরিহার্য।
ইমাম হাসান আসকারি (আ.) বলেছেন,
وَ اللَّهِ لَیغِیبَنَّ غَیبَةً لَا ینْجُو فِیهَا مِنَ التَّهْلُکَةِ إِلَّا مَنْ یثَبِّتُهُ اللَّهُ عَلَی الْقَوْلِ بِإِمَامَتِهِ وَ وَفَّقَهُ لِلدُّعَاءِ بِتَعْجِیلِ فَرَجِه
“আল্লাহর কসম! তিনি (ইমাম মাহদি) এমন এক দীর্ঘ গায়বাতে থাকবেন, যাতে কেবল সেই ব্যক্তি মুক্তি পাবে, যাকে আল্লাহ তাঁর ইমামতের ওপর দৃঢ় রাখেন এবং যাকে ইমামের ফারাজের জন্য দোআ করার তাওফিক দান করেন।”
[বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৫২, পৃ. ২৩]
অন্য দিক থেকেও ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এর জন্য দোআ করা একজন প্রকৃত প্রতীক্ষাকারীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। হাদীসসমূহে দেখা যায়, ইমাম রেজা (আ.) বিশেষভাবে ইমাম মাহদি (আ.)-এর জন্য দোআ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলতেন,
اللَّهُمَّ ادْفَعْ عَنْ وَلِیکَ وَ خَلِیفَتِکَ وَ حُجَّتِکَ عَلَی خَلْقِکَ….َ وَ احْفَظْهُ مِنْ بَینِ یدَیهِ وَ مِنْ خَلْفِهِ وَ عَنْ یمِینِهِ وَ عَنْ شِمَالِهِ وَ مِنْ فَوْقِهِ وَ مِنْ تَحْتِه….َ أَیدْهُ بِنَصْرِکَ الْعَزِیزِ وَ أَیدْهُ بِجُنْدِکَ الْغَالِبِ …..وَ وَالِ مَنْ والاهُ وَ عَادِ مَنْ عَادَاهُ…
“হে আল্লাহ! তুমি তোমার ওলি, প্রতিনিধি ও সৃষ্টির ওপর হুজ্জাতকে রক্ষা করো… তাঁকে সামনে-পেছনে, ডানে-বামে, ওপরে-নিচে—সব দিক থেকে হেফাজত করো… তাঁকে তোমার অপ্রতিরোধ্য সাহায্য দিয়ে শক্তিশালী করো, বিজয়ী সৈন্যবাহিনী দ্বারা সমর্থন করো… যাঁরা তাঁকে ভালোবাসে, তাদের তুমি ভালোবাসো এবং যাঁরা তাঁর শত্রু, তাদের তুমি শত্রু জ্ঞান করো।”
[বিহারুল আনওয়ার, খণ্ড ৯২, পৃ. ৩৩০]
সুতরাং গায়বাতের সময়ে ইমামের জন্য দোআ এবং তাঁর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক বজায় রাখা শিয়া বিশ্বাস ও আচার-আচরণের অন্যতম মৌলিক স্তম্ভ, যার রয়েছে অসংখ্য ফায়দা ও প্রভাব।
মাহদাভি দোআ ও জিয়ারতের দুইটি প্রধান শাখা:
(ক.) সেইসব দোআ ও জিয়ারত, যেগুলো সরাসরি ইমাম মাহদি (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং গায়বাতে সোগরা (অদীর্ঘ গায়বাত)-এর সময় তাঁর বিশেষ প্রতিনিধি/নায়েবদের মাধ্যমে শিয়াদের কাছে পৌঁছেছে; যেমন “জিয়ারতে আলে ইয়াসিন” এবং “দোআয়ে ফারাজ”।
(খ.) সেইসব দোআ ও জিয়ারত, যেগুলো অন্যান্য মা‘সুম (আ.) থেকে ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এর সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে; যেমন “দোআয়ে আহদ” এবং “সামেরার মুবারক সর্দাবে সাহিবুল আমর (আ.ফা.)-এর জিয়ারত”।
ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এর জন্য দোআ করা, তাঁর প্রতি তাওয়াস্সুল করা এবং তাঁকে জিয়ারত করা—এসবের কোনো নির্দিষ্ট সময় ও স্থান নেই। শিয়া ও তাঁর প্রতীক্ষায় থাকা প্রেমিকেরা যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানেই তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে নযবা করতে পারে, সালাম পেশ করতে পারে এবং তাঁর সঙ্গে নিজেদের অঙ্গীকার নবায়ন করতে পারে।
তবে সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমআ (শুক্রবার) রেওয়ায়েত অনুযায়ী ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এর প্রতি বিশেষভাবে সম্পর্কিত। সেজন্য এই দিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট জিয়ারত বর্ণিত হয়েছে, যা “জুমআর দিনে ইমাম যামান (আ.ফা.)-এর জিয়ারত” নামে পরিচিত।
শিয়া আলেমগণ—যেমন সাইয়্যেদ ইবনে তাওস, আল্লামা মাজলিসি ও শায়খ আব্বাস কুম্মী—যাঁরা দোআ ও জিয়ারতের উপর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন, তাঁদের বইগুলোতে ইমাম মাহদি (আ.ফা.)-এর জন্য বহু দোআ ও জিয়ারত সংকলিত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু দোআ ও জিয়ারত ঐসব আলেমদের সুপারিশপ্রাপ্ত ও শিয়া সমাজে সর্বাধিক পরিচিত ও আদৃত।
এই আলোচনা চলমান...
গ্রন্থসূত্র: নেগীনে অফারিনেশ গ্রন্থ থেকে সংক্ষিপ্ত ও পরিমার্জিত রূপে সংকলিত।
আপনার কমেন্ট